গতকালের সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তৃতায় জাতিসংঘের বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার ট্রম অ্যান্ড্রুস বলেন, ‘আরসার সদস্যদের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের হত্যা, নির্যাতন, অপহরণ ও ভয়ভীতি দেখানোর ব্যাপারে আমি বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পেয়েছি।’
আরসা নিয়ে বিশ্বাসযোগ্য তথ্যগুলো সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনায় তুলেছেন কি না, জানতে চাইলে জাতিসংঘের বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার বলেন, ‘নিরাপত্তার বিভিন্ন স্তরে যুক্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমার আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে যুক্ত নানা পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। সেখানে নানা রকম তৎপরতা নিয়ে লোকজন সতর্ক হয়ে উঠেছে। এ সমস্যাগুলোর সুরাহা হওয়া দরকার। তবে কী আলোচনা করেছি, তা বিস্তারিতভাবে এখানে বলতে চাই না। এ ব্যাপারে কোনো তথ্য বিনিময়ের প্রয়োজন হলে আমি অবশ্যই তা দেব।’
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় আরসা নিয়ে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য থাকার বিষয়টি তুলেছেন টম অ্যান্ড্রুস। এ সময় বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিরা তাঁর কাছে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য চাইলে তিনি তাঁদের সুস্পষ্টভাবে কিছু জানাতে পারেননি।
ওই সব আলোচনার একটিতে উপস্থিত ছিলেন এমন একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, জাতিসংঘের বিশেষ র্যাপোর্টিয়ারের কাছে যদি কোনো তথ্য থাকে, তবে তা বাংলাদেশকে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। কারণ, বাংলাদেশের কাছে এখন পর্যন্ত এমন কোনো তথ্য নেই যে আরসা বা আরসার কোনো প্রতিনিধি কক্সবাজারের শিবিরে সক্রিয় আছে। ফলে ‘বিশ্বাসযোগ্য কোনো তথ্য’ পেলে বাংলাদেশ তা নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী। কারণ, শিবিরের নিরাপত্তা নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগ আছে।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর মুহিবুল্লাহ হত্যার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে এখন পর্যন্ত কয়েক শ সন্ত্রাসী ধরা পড়েছে। অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সদস্য আরসার সক্রিয় সদস্য বলে দাবি করেছেন রোহিঙ্গা মাঝিরা। তাঁদের দাবি, মুহিবুল্লাহ হত্যার পর নিজেদের শক্তির জানান দিতে হত্যাসহ নানা সহিংসতার ঘটনা ঘটিয়ে আলোচনায় আসতে চাইছে আরসা।
কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে আরসার উপস্থিতির বিষয়টি সাম্প্রতিক খুনের ঘটনা থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এরা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সমর্থক, রোহিঙ্গাদের পক্ষের শক্তি নয়। এরা পাহাড়ি এলাকা পাড়ি দিয়ে শিবিরে এসে এসব অপতৎপরতায় জড়িত। হত্যা, হামলার ঘটনা থেকে স্পষ্ট যে রাতের বেলায় এসে এরা এসব অপকর্মে যুক্ত হয়। আবার আরসার সঙ্গে স্থানীয় সন্ত্রাসীরাও জড়িয়ে পড়েছে। রোহিঙ্গা শিবিরসহ কক্সবাজারের নিরাপত্তা পরিস্থিতি সুরক্ষিত করার স্বার্থেই এর সুরাহা হওয়া জরুরি।

0 মন্তব্যসমূহ